আটক দুই চাঁদাবাজকে জামিন দেয়নি আদালত

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যপরিবহনে প্রতিমাসে ৯০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

Passenger Voice    |    ০৫:২০ পিএম, ২০২৩-১২-৩১


চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যপরিবহনে প্রতিমাসে ৯০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

মোঃ জয়নাল আবেদীনঃ চট্রগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্যদের সীমাহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বন্দরে পণ্য আনা নেওয়ার কাজে প্রত্যেক ট্রাক কাভার্ডভ্যান থেকে শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে  প্রতিদিন ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন তারা। এভাবে বন্দরে প্রতিদিন ১০ হাজার ট্রাক কাভার্ডভ্যান থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। যা গড়ে প্রতি মাসে ৯০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে চক্রটি।

প্রতিটি পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান থেকে পরিচালনা ব্যয়ের নামে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার টেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে প্রতিদিন লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে আসছে বলে অভিযোগ ছিল দীর্ঘ দিন ধরে। অথচ  চাঁদা তোলার কোন নিয়ম না থাকলেও প্রশাসনের সামনেই দেদারসে তুলছে এই চাঁদা। এতে পণ্য পরিবহনে চরম অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। চাঁদা দিতে না চাইলে চালক-শ্রমিকদের করা হচ্ছে নির্যাতন। 

চলতি বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এসব অনিয়ম ঠেকাতে পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নিমতলা পিসি রোডে ব্যারিকেড দিয়ে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে সিএমপির উপ পুলিম কমিশনার (ট্রাফিক-বন্দর) শাকিলা সুলতানার নেতৃত্বে চাঁদাবাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। তবে বন্ধ হয়নি এই চাঁদাবাজি। গত ৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর গেইট এলাকায় চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চালকদের শারিরীকভাবে নির্যাতন করেন চাঁদাবাজরা। এই ঘটনায় সিএমপির গোয়েন্দা পশ্চিম শাখা মো. সেলিম ও আলমগীর নামের ২ চাঁদাবাজকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছেন। এই চাঁদাবাজদের চলতি মাসে তিনবার জামিনে মুক্তির দাবী করলেও আদালত তাদের জামিন দেয়নি। প্যাসেঞ্জার ভয়েসের অনুসন্ধানে এমন কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায় শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে পরিচালনা ব্যায়ের নামে পণ্য পরিবহন থেকে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে। এতে পণ্য পরিবহনে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাশাপাশি বন্দরে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই বিষয়ে পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব চৌধুরী জাফর প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির বিষয়ে প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। বিষয়টিকে তারা এড়িয়ে যাচ্ছে।

পণ্য পরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক বন্দর বিভাগ)  মোস্তাফিজুর রহমান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে। বন্দরে পণ্য পরিবহনে কোন ধরণের চাঁদাবাজি করা যাবে না। নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি তাদের সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে গঠনতন্ত্রে অনুমোধন আছে এমন টাকা তুলা হয় সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।  সংগঠন সদস্যের বাহিরে কারো কাছে চাঁদা দাবী করতে পারবে না। 

পণ্য পরিবহনের মালিক শ্রমিকদের সূত্র বলছে, নানান অজুহাতে রীতিমতো পণ্য পরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করছে সংঘবদ্ধ চক্র। কোন প্রকার নির্দেশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেই তাদের কাছে। এসব প্রকাশ্য চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তৎপর হলে এবং আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে অসাধু মালিক সমিতি কিছুদিন নীরব থাকে। পরে আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারা ফেডারেশনের ফান্ডের নামে অবৈধভাবে চাঁদা নিচ্ছে। তাদের চাঁদা না দিলে চালকের উপর চালায় শারিরীক নির্যাতন। স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ অতিশীঘ্রই স্থায়ী একটি সমাধান হোক।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর সবুর প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে বলেন, আমাদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি রয়েছে। এ ছাড়া আমরা চাঁদা আদায় করছি না। আমরা নিচ্ছি সার্ভিস চার্জ অর্থাৎ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল। আর তহবিল গোপনে আদায় করার কোন সিস্টেম নেই। আমরা লোড এবং আনলোড পয়েন্ট থেকে তহবিল তুলে থাকি। এসময় প্রতিবেদক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির কপি চাইলে তিনি দিতে পারেন নি। 

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি শফিকুর রহমান প্যাসেঞ্জার ভয়েসকে , প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি বা ফান্ড সংগ্রহে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে বলে এই নেতা দাবী করলেও আদেশের কোন কপি তিনিও দিতে পারেনি।